Header Ads

Header ADS

১.১. 'ফিলসফি'–এই শাস্ত্রের স্বরূপ (Nature of Philosophy)

 ১.১. 'ফিলসফি'–এই শাস্ত্রের স্বরূপ (Nature of Philosophy)

ফিলসফি পড়তে বসে মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে এর বিষয়বস্তুটি কী বা এর সংজ্ঞা কী? 'বিসফি'—এই বিষয়টির স্বতীয় বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এখনও পর্যন্ত এর কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা প্রদত্ত হয়নি। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে “ফিলসফি’র নানারকমের সংজ্ঞা দিয়েছেন। দু'হাজার বছরের বেশি সময় ধরে ‘ফিলসফির চর্চা হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এমন কোনো সংজ্ঞা আবিষ্কৃত হয়নি যা সকলে মেনে নিতে পারেন। তাই “ফিলসফি? কাকে বলে আমরা বোঝার চেষ্টা করব তথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

(Philosophy) কথাটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ থেকে Philos এবং 'Sopllia'। 'Plulos' শব্দটির অর্থ হল অনুরাগ (love) এবং 'Sophia' শব্দটির অর্থ হয় Philosophy শব্দটির অর্থ জ্ঞান (Wisdom) কালেই, ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে Philoso জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ phy" কথাটি ল- 'জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ অর্থাৎ love of windom)। সুতরাং, এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনিই 'ফিসার' (Philosopher) যাঁর জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ আছে।

পাশ্চাত্য দেশে যে বিষয়কে Philosophy বলে, তারই প্রতিশব্দ হিসেবে আমাদের দেশে 'দর্শন' পদটি প্রচলিত আছে। সংস্কৃত দর্শন পদটির উৎপত্তি হয়েছে দৃশ্ ধাতুর সঙ্গে অনট্ প্রত্যয় যোগ করে। সাধারণ লোক দর্শন বলতে চাক্ষুস প্রত্যক্ষকে বোঝেন। কিন্তু ভারতীয় ভারতীয়দের কাছে পানি হল সত্যদর্শন বা প্রদর্শন। দার্শনিকদের কাছে 'দর্শন'— এই পদটির অর্থ চাক্ষুস প্রত্যক্ষ নয়। তাঁদের কাছে দর্শন হল সত্যদর্শন, তত্ত্বদর্শন। ভারতীয় দার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন যে দর্শনের আলোচনা শুধুমাত্র বুদ্ধির কসরত নয়, জীবনকে ঠিকপথে পরিচালিত করার জন্যই দর্শনের উত্তর হয়েছে। ভারতীয় দার্শনিকগণ মনে করেন যে, জীবনকে যথাযথ রূপায়নের জন্য সত্যজ্ঞানের প্রয়োজন। কাজেই তাঁদের কাছে তিনিই দার্শনিক যিনি সত্যকে জেনেছেন, যিনি তত্ত্বকে জেনেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজন অন্ধ ব্যক্তিও দার্শনিক হতে পারেন যদি তিনি সত্যকে উপলব্ধি করে থাকেন বা তত্ত্বকে উপলব্ধি করে থাকেন। যিনি সত্যকে বা তত্ত্বকে জেনেছেন, জগৎ ও জীবনের যথার্থ স্বরূপ তাঁর কাছে উদ্ঘাটিত হয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে যে, "Philosophy" শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে 'দর্শন' পদটি ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। কারণ, ‘জানের প্রতি অনুরাগ' এবং 'সত্যদর্শন' বা 'তত্ত্বদর্শন' একই কথা নয়। কিন্তু তবু প্রবেশিকা হিসেবে 'দর্শন' পদটি প্রচলিত আছে। তার কারণ, পাশ্চায় শে এঁরা যে বিষয়টিকে Philosophy বলেন এবং আমরা যাকে দর্শনশাস্ত্র বলি এই দুটি বিষয়ের আলোচনা পদ্ধতির সাদৃশ্য আছে এবং দুটি বিষয়ের আলোচ্য বিষয়বস্তুর সাদৃশ্য আছে। তাছাড়াও, উভয়েই জীবনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে স্বীকার করে নেয়। তাই Philosophy- প্রতিশব্দ হিসেবে Philisophy- প্রতিশব্দ বিষয় এবং পদ্ধতির সাদৃশ্যের WAT প্রতিশব্দ হিসেবে দর্শন পদটি ব্যবহৃত পৃথিবীর কোলে যেদিন মানুষ প্রথম আবির্ভূত হয়, সেদিন থেকে এক হিসেবে ‘ফিলসফি’ বা দর্শনের উদ্ভব হয়েছে বলা চলে। আদিম মানুষের মনও প্রকৃতির বিপুল ঐশ্বর্যে বিষয়াপ্লুত হয়ে পড়ে। তার মনে প্রশ্ন জাগে-আমি কে? কোথা থেকে এসেছি আমি? কোথায় যেতে হবে আমাকে? এই পৃথিবীর সঙ্গে বিষণ্ন থেকে মাসে অনিবার্য সম্পর্ক আমার? এই পৃথিবীর কি কোনো সৃষ্টিকর্তা আছেন? যদি থাকেন, তাঁর সঙ্গে এই পৃথিবীর সম্পর্ক কী? মৃত্যুর স্বরূপ ? মৃত্যুতেই কি জীবনের যবনিকা, না মৃত্যুর পরেও একটা জীবন আছে? এই সমস্ত নানা প্রশ্ন মানুষের মনে ভ্রমণ দেখা দিয়েছে। বিস্ময় থেকে এসেছে জানবার আকাঙ্ক্ষা। বিস্ময় করেছে মানুষকে তত্ত্বাভিমুখী। মানুষ তার সঙ্গ বুদ্ধি দিয়ে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে। এইভাবেই উদ্ভব হয়েছে দর্শনের আমাদের সকলেরই জীবন, জগৎ ও পরিবেশ সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা বা বিশ্বাস (belief) আছে। সেইদিক দিয়ে বিচার করলে আমরা সবাই ছোটো বড়ো দার্শনিক। সাধারণত কোনো ব্যক্তির দর্শন বলতে তার বিশ্বাস বা ধারণার সমষ্টিকে বোঝায়। এই ধারণাগুলির উৎস অনেক রকমের— কতকগুলি ধারনা আমরা বংশপরম্পরায় আমাদের মধ্যে পরিবাহিত হয়, কতকগুলি ধারণা সংস্কারের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এই ধারণাগুলির সবগুলি সমানভাবে যথার্থ নাও হতে পারে। একজন ব্যক্তির সব ধারণা যুক্তিতর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত নাও হতে পারে। দর্শনের কাজ হল এই ধারণাগুলিকে খতিয়ে দেখা। অধ্যাপক হকিং এই প্রসঙ্গে বলেন, “দর্শন যে কাজটি করে তা হচ্ছে—এই ধারণাগুলির ভিত্তি কী তা অনুসন্ধান করা এবং কোন কোন ভিত্তি যথার্থ তা নিরূপণ করা। দর্শনের লক্ষ্য হল আমাদের সাধারণ ধারণার মধ্যে ভ্রান্তি এবং সদ্গতিকে দূর করে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে সুসংহত ও সুনিশ্চিত জ্ঞান দান করা। আমাদের সাধারণ মানুষের পরিবেশের কাছ থেকে অর্জন করি, কতকগুলি ধারণা বিজ্ঞানও জীবন ও জগৎ সম্পর্কে সুসংহত, সুনিশ্চিত এবং নির্ভুল জ্ঞান দিতে চায়। কিন্তু বিজ্ঞানের কিছু অপূর্ণতা আছে। বিজ্ঞান নির্বাচনমূলক। প্রত্যেক বিজ্ঞান প্রকৃতির এক একটি বিভাগকে নিয়ে আলোচনা করে। তার ফলে বিজ্ঞানীর দৃষ্টি হয়ে যায় খণ্ডিত। কিন্তু দার্শনিক এক সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে চান এবং প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যে সংযোগ আছে তা বোঝার জন্য সচেষ্ট হন। তাছাড়া, অনেক সময়



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.